Posts

Showing posts from October, 2024

নদীর পাড়ের ভুতুড়ে শেওড়া গাছ

**নদীর পাড়ের ভুতুড়ে শ্যাওড়া গাছ**   পূর্ব বাংলার এক নিস্তব্ধ গ্রাম। এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটি গভীর নদী। নদীর নাম কীর্তিনদী। তার জলের স্রোত সারা বছরই প্রবাহিত, তবে বর্ষায় তা আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। এই নদীর পাড়েই বিশাল একটি শ্যাওড়া গাছ দাঁড়িয়ে আছে। গাছটি কত পুরনো, তার সঠিক হিসেব গ্রামের কারও জানা নেই। তবে গ্রামের প্রাচীনতম মানুষরাও ছোটবেলায় গাছটিকে একই রকম দেখেছেন। সে যেন চিরকাল এই নদীর পাড়েই দাঁড়িয়ে আছে।      গাছটি সম্পর্কে গ্রামে এক অদ্ভুত বিশ্বাস আছে—তাতে ভূত থাকে। দিনের বেলায় গাছটি সাধারণের মতই লাগে, তবে রাতের বেলায় এর চেহারা পুরোপুরি বদলে যায়। গাছের পাতাগুলো তখন যেন নিঃশব্দে কাঁপতে থাকে, শাখাগুলো যেন নিজে থেকে নড়ে ওঠে। বাতাস না থাকলেও পাতার কাঁপন শুনে মনে হবে যেন কেউ ওদের স্পর্শ করে যাচ্ছে।      যারা কীর্তিনদীর পাড়ের এই গাছের কাছ দিয়ে রাতের বেলা গেছেন, তারা কেউ আর স্বাভাবিক থাকেননি। কেউ পাগল হয়েছেন, কেউ হারিয়ে গেছেন, আবার কেউ শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এরকমই এক ঘটনা ঘটেছিল গ্রামের রবি নামের এক যুবক...

জঙ্গলের পাসের ভুতুড়ে তালগাছ।

 ###ভুতুড়ে তালগাছ গভীর জঙ্গলের প্রান্তে একটি ছোট্ট গ্রাম ছিল, নাম তার আন্ধারিপুর। এই গ্রামের এক প্রান্তে বিশাল একটি তালগাছ দাঁড়িয়ে ছিল, যেনো গ্রামের প্রহরী। তালগাছটি এত উঁচু যে এর শীর্ষ পর্যন্ত পৌঁছানো কারও পক্ষে সম্ভব নয়। গ্রামের বয়স্করা বলত, এই তালগাছের নীচে নাকি রাতে ভুতের আসর বসে। দিনের বেলা তালগাছটি যেনো একেবারে নির্দোষ, নীরব সাক্ষীর মতো দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু সূর্য অস্ত গেলে, চারপাশে যখন গা ছমছমে অন্ধকার নেমে আসে, তখন তালগাছটি নাকি জীবন্ত হয়ে ওঠে, এবং তার পাতা ও ডালপালা থেকে শুরু হয় ভৌতিক কান্ড। গ্রামের লোকেরা দিনের বেলায় তালগাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার সাহস করলেও, রাত হলে কেউ আর তার ধারে-কাছে ঘেঁষত না। সন্ধ্যা নামতেই চারপাশের জঙ্গল থেকে অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যেত, যেন কারা নিঃশব্দে পায়ে হেঁটে তালগাছের দিকে এগিয়ে আসছে। সেই আওয়াজের সঙ্গে মিশে যেত একটি হালকা হাসির সুর। কারও কারও মতে, তা ছিল এক নারী ভুতের হাসি, যার আত্মা নাকি তালগাছের আশেপাশে ঘোরাফেরা করত। অনেক দিন আগে এই গ্রামে কনকলতা নামে এক মেয়ে থাকত। সে ছিল খুব সুন্দরী, কিন্তু তার ভাগ্য ছিল দুঃখময়। কনকলতার বিয়ে ঠিক হয়ে...

ভুতুড়ে জমিদার বাড়ি

 ###ভুতুড়ে জমিদার বাড়ি  একটি প্রত্যন্ত গ্রামে, নাম তার সাতকানিয়া। চারপাশে গাছগাছালি আর ছোট ছোট পুকুরে ভরা, যেন প্রকৃতির মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক শীতল স্থান। এই গ্রামেই দাঁড়িয়ে আছে এক পুরোনো পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ি—দূর থেকে দেখলে মনে হবে সময়ের সাথে লড়াই করে দাঁড়িয়ে আছে এক নিঃসঙ্গ আত্মা। বাড়িটির নাম ‘রায়চৌধুরী বাড়ি’। স্থানীয়দের কাছে এটি শুধুই এক প্রাচীন ঐতিহ্যের অংশ নয়; এটি রূপকথার রহস্য আর ভূতের গল্পের প্রতীক। রায়চৌধুরী পরিবারের ইতিহাস এ বাড়ির দেয়ালগুলোর গায়ে এখনো আঁকা আছে। একসময় এই পরিবারের ছিল অগাধ সম্পদ ও ক্ষমতা। জমিদারি শাসনকালে তারা শাসন করত সাতকানিয়া সহ আশেপাশের গ্রামগুলো। তবে জমিদারের অমর্যাদা, অত্যাচার ও পৈশাচিক স্বভাবের কারণে তাদের পতন ঘটেছিল হঠাৎ করেই। শেষ জমিদার ছিলেন রাজনারায়ণ রায়চৌধুরী, যিনি প্রচণ্ড নিষ্ঠুর ছিলেন। গ্রামের মানুষদের উপর তাঁর অত্যাচারের কোনো সীমা ছিল না। শোনা যায়, এক রাতে গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তি জমিদারকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। তারা সবাই মিলে জমিদারবাড়িতে ঢুকে রাজনারায়ণকে হত্যা করেছিল। জমিদারবাড়ির প্রাচুর্যের অবসান ঘটল সেই রাতেই...

তেতুল তলার ভুত

 ### তেতুল তলার ভূত গাঁয়ের নাম কাশীপুর। সময়টা রাতের অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া এক শীতল সন্ধ্যা। পূর্ণিমার আলোয় ঢেকে থাকা গাঁয়ের পথে সাদা ধোঁয়ার মতো কুয়াশা ভেসে বেড়াচ্ছে। গাঁয়ের মানুষগুলো দিনের শেষে ঘরে ফিরে গিয়েছে। সব কিছু যেন থমকে গেছে। কিন্তু এই নীরবতার মধ্যে এক জায়গা, যেখানে পা রাখার সাহস কারো নেই—তেতুল তলা। তেতুল গাছটা বিশাল। বয়স প্রায় একশো বছরের বেশি হবে। গাছটার নিচে একটা পুরনো পাথরের বেদী, যা দেখে মনে হয় কোনো পুরনো মন্দিরের অংশ ছিল এককালে। গাঁয়ের বয়স্করা বলেন, এই গাছটা অভিশপ্ত। রাত হলে তেতুল তলার ভূতের আনাগোনা শুরু হয়। অনেকেই বলেছে, রাতে সেখানে গেলে অদ্ভুত আওয়াজ শুনতে পায়, যেন কেউ গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে আছে। কেউ কেউ বলেছে, গাছের তলায় বসে হঠাৎ কারো নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ পেয়েছে, কিন্তু কাছেপিঠে কেউ ছিল না। কিছুদিন আগে গ্রামের মন্দিরের পুরোহিত গোপাল ঠাকুরের ছেলে কালীচরণ রাতের বেলা তেতুল তলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। বাড়ি ফেরার তাড়া ছিল, কিন্তু সাহস করে গাছের নিচ দিয়ে হেঁটে গেল সে। কালীচরণ বেশ সাহসী ছেলে, ভূতের গল্পে তার কোনো বিশ্বাস ছিল না। হঠাৎই সে দেখল, গাছের ডাল থেকে নিচে কিছু একটা ...

কুশীনগর এর ভুতুরে মন্দির

 রাত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। চারপাশ নিস্তব্ধ। হিম বাতাস কাঁপন ধরাচ্ছে গাছের পাতায়। ছোট্ট গ্রামটির নাম ছিল কুশীনগর। গ্রামের মানুষজন ভুত-প্রেতের গল্পে অভ্যস্ত, কিন্তু যা ঘটতে যাচ্ছে তা ছিলো কল্পনারও বাইরে। রাতের বেলা এই গ্রামে কেউ বাইরে থাকে না। একবার সূর্য অস্ত গেলে সবাই দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের ভেতরে বসে থাকে। কারণ গ্রামটির পাশে রয়েছে পুরনো একটি ভাঙা মন্দির। শত বছরের পুরনো মন্দিরটি এখন জঙ্গলে ঢাকা পড়েছে, চারপাশে শুধু গাছপালা আর লতাপাতা। গ্রামের বয়স্করা বলে, সেই মন্দিরে অশুভ শক্তি আছে। অনেক বছর আগে সেখানে এক ভয়ানক ঘটনা ঘটেছিল, যার রেশ আজও গ্রামবাসীর মাঝে ছড়িয়ে আছে। সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। গ্রামে নতুন এসেছেন রাহুল নামের এক তরুণ। সে শহর থেকে এসেছে কুশীনগরের রহস্যময় ইতিহাসের গবেষণা করতে। গ্রামের লোকজন তাকে বহুবার সতর্ক করেছিল যেন সে রাতের বেলা মন্দিরের আশেপাশে না যায়, কিন্তু রাহুল ছিল অকুতোভয়। সে গ্রামবাসীর কথায় বিশ্বাস করত না, আর সে চেয়েছিল মন্দিরের ভেতরের অজানা ইতিহাসের মুখোমুখি হতে। রাহুল ঠিক মধ্যরাতে তার টর্চ নিয়ে বের হলো মন্দিরের দিকে। চারদিক নিস্তব্ধ, শুধু মাঝে মাঝে পেঁচার ডাক ...