কুশীনগর এর ভুতুরে মন্দির
- Get link
- X
- Other Apps
রাত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। চারপাশ নিস্তব্ধ। হিম বাতাস কাঁপন ধরাচ্ছে গাছের পাতায়। ছোট্ট গ্রামটির নাম ছিল কুশীনগর। গ্রামের মানুষজন ভুত-প্রেতের গল্পে অভ্যস্ত, কিন্তু যা ঘটতে যাচ্ছে তা ছিলো কল্পনারও বাইরে।
রাতের বেলা এই গ্রামে কেউ বাইরে থাকে না। একবার সূর্য অস্ত গেলে সবাই দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের ভেতরে বসে থাকে। কারণ গ্রামটির পাশে রয়েছে পুরনো একটি ভাঙা মন্দির। শত বছরের পুরনো মন্দিরটি এখন জঙ্গলে ঢাকা পড়েছে, চারপাশে শুধু গাছপালা আর লতাপাতা। গ্রামের বয়স্করা বলে, সেই মন্দিরে অশুভ শক্তি আছে। অনেক বছর আগে সেখানে এক ভয়ানক ঘটনা ঘটেছিল, যার রেশ আজও গ্রামবাসীর মাঝে ছড়িয়ে আছে।
সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। গ্রামে নতুন এসেছেন রাহুল নামের এক তরুণ। সে শহর থেকে এসেছে কুশীনগরের রহস্যময় ইতিহাসের গবেষণা করতে। গ্রামের লোকজন তাকে বহুবার সতর্ক করেছিল যেন সে রাতের বেলা মন্দিরের আশেপাশে না যায়, কিন্তু রাহুল ছিল অকুতোভয়। সে গ্রামবাসীর কথায় বিশ্বাস করত না, আর সে চেয়েছিল মন্দিরের ভেতরের অজানা ইতিহাসের মুখোমুখি হতে।
রাহুল ঠিক মধ্যরাতে তার টর্চ নিয়ে বের হলো মন্দিরের দিকে। চারদিক নিস্তব্ধ, শুধু মাঝে মাঝে পেঁচার ডাক শোনা যাচ্ছে। রাহুল ধীরে ধীরে মন্দিরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। মন্দিরের সামনে পৌঁছেই সে দেখতে পেলো, পুরো মন্দিরটাকে যেন কালো এক ধোঁয়া ঘিরে রেখেছে। এই ধোঁয়ার মধ্যেই কেমন যেন একটা অস্পষ্ট ছায়া দেখা যাচ্ছে। রাহুলের মনে হলো যেন ছায়াটা তাকে ডেকে বলছে, “এসো… এসো…”
মন্দিরের ভেতরে ঢুকতেই রাহুলের মনে হলো যে সে কোন অশুভ শক্তির প্রভাবে আটকা পড়েছে। চারপাশে কেমন যেন শীতল একটা অনুভূতি ছড়িয়ে আছে, যা তার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেলো। মন্দিরের ভাঙাচোরা মেঝেতে হঠাৎ করে কে যেন হেঁটে যাচ্ছে এমন আওয়াজ শোনা গেল। রাহুল দ্রুত পেছনে তাকালো, কিন্তু কিছুই দেখল না। কিন্তু পরক্ষণেই সে অনুভব করল কেউ তার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। সে দ্রুত টর্চের আলো পেছনে ঘোরালো, কিন্তু কেউ নেই। কিন্তু হঠাৎ করেই তার টর্চের আলো নিভে গেল।
এবার রাহুলের শরীর পুরোপুরি শীতল হয়ে গেল। তার সামনে ধীরে ধীরে এক মূর্তি ফুটে উঠছে—এক ভয়ানক চেহারার নারী। তার সাদা শাড়ি, রক্তে মাখা হাত, আর পাথরের মতো শক্ত কালো চোখ। রাহুলের মুখ থেকে কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না। নারীর ঠোঁটে হালকা এক হাসি ফুটে উঠল, যা তার হাড় কাঁপানো ভয়ের সঞ্চার করল।
নারী হঠাৎ করেই কথা বললো, “তুমি কেন এখানে এসেছো? তুমি কি জানো, আমি কে?”
রাহুল কোনো কথা বলতে পারলো না, শুধু তার দৃষ্টি স্থির রইলো নারীর মুখে।
“তুমি হয়তো জানো না,” নারী বলতে থাকলো, “আমি সেই আত্মা, যে এই মন্দিরে বহু বছর আগে আত্মাহুতি দিয়েছিল। আমার আত্মা এই মন্দিরে বন্দী, আর আমাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রতি পূর্ণিমায় একজন মানুষের আত্মা চাই। তুমি এবার সেই বলি!”
রাহুলের শরীর অবশ হয়ে গেল। তার মনে হলো সে কোন দুঃস্বপ্নের মধ্যে আটকে আছে। হঠাৎ করেই নারীর পা মাটির থেকে উড়তে শুরু করলো, আর তার শরীরের চারপাশে কালো ধোঁয়া জমতে লাগলো। নারীর চোখ দুটি রাহুলের দিকে তাকিয়ে রইলো, এবং ধীরে ধীরে তার হাত বাড়িয়ে দিলো রাহুলের দিকে।
রাহুল পেছনের দিকে হাঁটার চেষ্টা করলো, কিন্তু সে কোনোভাবেই নিজের শরীর নড়াতে পারছিল না। নারীর হাত তার দিকে আসতেই রাহুলের শরীর শক্ত হয়ে গেল, আর নারীর হাত তার গলায় স্পর্শ করতেই সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল।
পরের দিন সকালে, গ্রামের লোকজন রাহুলকে মন্দিরের বাইরে মৃত অবস্থায় পেল। তার শরীরটা কেমন যেন শুকিয়ে গিয়েছিল, আর তার চোখ দুটি ছিল ভয়ের চিহ্নে ফোলা। তার মুখে স্থির হয়ে থাকা সেই ভয়ের ছাপ গ্রামের সবাইকে কাঁপিয়ে দিলো।
গ্রামের প্রধান পুরোহিত বললেন, “আমি বলেছিলাম, এই মন্দিরে অশুভ আত্মা আছে। পূর্ণিমার রাতে কেউ সেখানে গেলে আর ফিরে আসে না।”
সেই ঘটনার পর থেকে কুশীনগরের মানুষজন আর কোনোদিন মন্দিরের দিকে পা বাড়ায়নি। রাত নামলেই সবাই দরজা বন্ধ করে দেয়, কারণ তারা জানে, মন্দিরের সেই আত্মা এখনো মুক্তি চায়। পূর্ণিমার রাত এলেই তারা শোনে বাতাসে ভেসে আসা সেই নারীর মৃদু ডাক—“এসো… এসো… আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি…”
এখনো কেউ জানে না, কবে সেই আত্মার মুক্তি হবে, কিংবা আর কতজনকে তার শিকার হতে হবে।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment